জলসিড়ি আবাসন, স্বপ্নের আরেক হাতছানি

ঢাকার কোলঘেঁষে এক সময়ের “আর্মি হাউজিং স্কিম” এখন আর শুধুমাত্র একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি পরিণত হয়েছে একটি স্বপ্নের শহরে জলসিড়ি আবাসন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্পটি ঠিক যেমন রূপ বদলেছে, তেমনি বদলে দিয়েছে ঢাকার আবাসন পরিকল্পনার মানচিত্রও। শুধু নাম নয়, বদলেছে চিন্তাধারাও। আজ যারা একটু প্রশান্তি, নিরাপত্তা আর আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধার খোঁজে আছেন, জলসিরি আবাসন তাদের জন্য যেন এক অপার সম্ভাবনার ঠিকানা।

সহজ যাতায়াত, শহরের সঙ্গে নিখুঁত সংযোগ

আপনি যদি নিয়মিত ঢাকার উত্তরে যাতায়াত করেন, তাহলে জলসিরির অবস্থান আপনার চোখ এড়াবে না। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র কিছু সময়ের পথ। কুড়িল ফ্লাইওভার আর ৩০০ ফিট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা তো রয়েছেই। তারও চেয়ে বড় কথা, মাদানী অ্যাভিনিউ হয়ে নির্মাণাধীন ঢাকা-সিলেট বাইপাস সড়কের সাথে সরাসরি সংযোগ থাকায় ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে এখানে আসা এখন অনেকটাই সহজ।

শুধু তা-ই নয়, জলসিড়ি একমাত্র আবাসন প্রকল্প যার সঙ্গে একযোগে চারটি বড় সড়ক যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, বসুন্ধরা, মাদানী অ্যাভিনিউ এবং শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাশ। সামনে যখন মেট্রোরেল ১ এবং ৫ চালু হবে, তখন এই প্রকল্পের যোগাযোগ সুবিধা অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাবে।

১৭টি সেক্টরে ভাগ করা এই বিশাল প্রকল্প

প্রায় ২১৩৩ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে জলসিড়ি, যেখানে নিখুঁত পরিকল্পনার ছোঁয়া স্পষ্ট। প্রকল্পটি ১৭টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে, যার প্রতিটিতেই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য। সেনাবাহিনীর জন্য নির্দিষ্ট কিছু সেক্টরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সেক্টর সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত। যেমন সেক্টর ১, ২, ৩ ও ১০ এখানে আপনি চাইলেই প্লট কিনতে পারবেন।

প্লটের সাইজও আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী বেছে নেওয়া যাবে ৫ কাঠা থেকে শুরু করে ২৫ কাঠা পর্যন্ত। আর যাঁরা ব্যবসায়িক পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের জন্য রয়েছে আলাদা কমার্শিয়াল সেক্টর, যেখানে গড়ে উঠবে সুউচ্চ ভবন, অফিস ও শপিং কমপ্লেক্স।

লেক, পার্ক, স্কুলযেন ছোটো এক শহর

জলসিরির প্রতিটি সেক্টরই যেন নিজে একটা ছোট শহর। স্কুল, খেলার মাঠ, সুপারমার্কেট, পার্ক সব কিছুই সেখানে থাকবে হাতের নাগালে। সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো এখানে তৈরি হচ্ছে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লেক, যা একে শুধু বসবাসযোগ্য নয়, বরং জীবন উপভোগ করার মতো একটি আবাসন প্রকল্পে পরিণত করেছে।

আর আছে সেই সেন্ট্রাল পার্ক, যেখানে গেলে অনেকেই ভুলে যান এটা বাংলাদেশ। শুরুতে এটি সেনা পরিবারের জন্য সীমিত থাকলেও এখন নির্দিষ্ট দিনে সাধারণ জনগণের জন্যও উন্মুক্ত। প্রবেশমূল্য কিছুটা বাড়লেও, বিনিময়ে আপনি পাবেন শহরের কোলাহল থেকে দূরে এক টুকরো সবুজ প্রশান্তি।

গল্ফ মাঠ, মসজিদ খেলাধুলার সুব্যবস্থা :

প্রকল্পের আরেকটি বড় আকর্ষণ হলো আন্তর্জাতিক মানের গল্ফ মাঠ, যেটি নির্মাণাধীন অবস্থায়ও চোখে পড়ে। সৌদি মসজিদের আদলে এখানে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি মনোরম মসজিদ, যার কাজ ইতিমধ্যে অনেকাংশে সম্পন্ন। পাশাপাশি প্রতিটি সেক্টরেই থাকবে খেলার মাঠ, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, স্টেডিয়াম ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স যা শিশু-কিশোরদের জন্য হবে আদর্শ পরিবেশ।

প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট সিটি :

জলসিরিকে শুধু আবাসন বললে কম বলা হবে। এটি আসলে একটি স্মার্ট সিটি, যেখানে থাকবে:

  • মাটির নিচে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও ড্রেনেজ লাইন
  • আইসিটি কন্ট্রোল সেন্টার
  • ট্রাফিক মনিটরিং সিস্টেম
  • আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা

যদিও এখন ওভারহেড বিদ্যুৎ লাইন দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, ভবিষ্যতে সবকিছুই মাটির নিচে নিয়ে যাওয়া হবে। এই দিকগুলো জলসিরিকে আলাদা করে তুলেছে দেশের অন্যান্য প্রকল্পগুলোর থেকে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো :

এখানে ইতিমধ্যে চালু হয়েছে কয়েকটি গুণগতমানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন:

  • শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ
  • বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল
  • জলসিরি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ

পাশাপাশি ভবিষ্যতে এখানে তৈরি হবে একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল বোর্ড ক্লাব, যা একে পরিপূর্ণ জীবনধারার জন্য আদর্শ করে তুলবে।

প্রকল্পের ইতিহাস: শুরু যেভাবে

জলসিরি প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে। মূল পরিকল্পনা ছিল ১৩,০০০ বিঘা জমিতে, কিন্তু পরে তা সীমাবদ্ধ করা হয় প্রায় ২১৩৩ একরে। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন।

২০০৯ সালেই সরকার সব অনুমোদন ও কাগজপত্র সম্পন্ন করেছিল। বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগে এই প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ :

জলসিরি শুধু একটি আবাসন নয়, এটি একটি নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র। ভবিষ্যতে এখানে থাকবে:

  • ফাইভ স্টার হোটেল
  • ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার
  • হাই-রাইজ বিল্ডিং জোন
  • সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট

এত সব কিছু মিলিয়ে, জলসিরি এখন ঢাকার প্রান্তে গড়ে ওঠা একটি আধুনিক শহর—যেখানে বসবাস মানে শুধু ছাদের নিচে থাকা নয়, বরং প্রতিটি দিন উপভোগ করা।

যাঁরা প্রকৃত অর্থেই একটি সুপরিকল্পিত, নিরাপদ ও মানসম্পন্ন বসবাসের জায়গা খুঁজছেন, জলসিড়ি আবাসন তাঁদের জন্য নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা বিকল্প। ঢাকার এত কাছেই এমন সবুজ, নির্মল ও আধুনিক একটি জায়গা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। আর আজ যখন শহরের ভিড়ে একটু প্রশান্তি পাওয়াই দুষ্কর, তখন জলসিরির মতো প্রকল্প যেন আশার আলো হয়ে উঠছে আমাদের নাগরিক জীবনে।

 

Spread the love

Join The Discussion