প্যাসিভ প্রপার্টি বিজনেস অর্থাৎ সময় ও শ্রম ছাড়াই রিয়েল এস্টেট থেকে আয়ের মেথড

প্যাসিভ প্রপার্টি বিজনেস অর্থাৎ সময় শ্রম ছাড়াই রিয়েল এস্টেট থেকে আয়ের মেথড :

কোনো রকম সময় না দিয়ে ফুল-টাইম চাকরি করেও কীভাবে বছরে প্রপার্টি বিজনেস করে আয় করবেন? আজকে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি প্যাসিভ প্রপার্টি বিজনেস বা প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্ট বিষয়ে।

প্যাসিভ প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্ট বা আয়ের নতুন দিগন্ত :

বর্তমান যুগে আয়ের সোর্স ডাইভার্সিফাই করার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে বহুগুণ । আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, চাকরি, ব্যবসা বা ফ্রিল্যান্সিং সবক্ষেত্রেই অনিশ্চয়তা রয়েছে। কিন্তু রিয়েল এস্টেট হলো এমন একটি সেক্টর যা স্থিতিশীল আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির নিশ্চয়তা দেয় সবসময়। সমস্যা হলো, রিয়েল এস্টেটে ইনভেস্ট করতে গেলে প্রয়োজন প্রচুর সময়, এক্সপেরিয়েন্স এবং ক্রমাগত মনোযোগ।

আর এখানেই “প্যাসিভ প্রপার্টি বিজনেস” গেম-চেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে । এটি এমন একটি মডেল যেখানে আপনি শুধু টাকা দিয়ে একটি প্রপার্টির মালিকানা পান, আর বাকি কাজ ক্রয়, ম্যানেজমেন্ট, বিক্রয় একটি অভিজ্ঞ টিম করে দেয়। এই আর্টিকেলে জানবেন কীভাবে এই মডেল কাজ করে, এর সুবিধা-অসুবিধা, এবং সফলতার বিষয়সমূহ :

প্যাসিভ প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্ট কী?  বিস্তারিত :

প্যাসিভ প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্ট হলো একটি সম্মিলিত বিনিয়োগ মডেল, যেখানে একাধিক ইনভেস্টর তাদের পুঁজি একত্রিত করে একটি বা একাধিক প্রফিটেবল প্রপার্টি ক্রয় করে। এই প্রক্রিয়ায় একজন ইনভেস্টরের ভূমিকা শুধুই আর্থিকভাবে সাপোর্ট দেয়া এবং প্রয়োজনমতো টাকা ইনভেস্ট করা ও মাঝে মাঝে কাজের আপদেট নেওয়া ।এক্ষেত্রে প্রপার্টি ম্যানেজমেন্টের সমস্ত দায়িত্ব যেমন সোর্সিং, নেগোশিয়েশন, রেনোভেশন বা নির্মাণ , ভাড়া বা বিক্রয় একটি পেশাদার টিম হ্যান্ডেল করে থেকে। এই টিম সাধারণত রিয়েল এস্টেট এক্সপার্ট , লিগ্যাল এক্সপার্ট, প্রপার্টি ম্যানেজার এবং মার্কেট অ্যানালিস্টদের নিয়ে গঠিত হয়ে থাকে।

কীভাবে আলাদা করবেন ট্র্যাডিশনাল ইনভেস্টমেন্ট থেকে?

ঐক্যবদ্ধ পুঁজি হতে পরে একটি অনন্য সিদ্ধান্ত।

একক ইনভেস্টর হিসাবে বড় প্রপার্টি কেনা কঠিন, কিন্তু সম্মিলিত মডেলে ছোট অঙ্ক দিয়েও বিনিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে এবং জিরো অপারেশনাল কাজ বা কোনো রকম সময় দেয়া ছাড়াই নিশ্চিন্ত থাকা সহ কোনো কিছুরই চিন্তা করতে হয় না।

আজকাল ডাইভার্সিফাইড পোর্টফোলিও করে বা একই সাথে রেন্টাল, কমার্শিয়াল ও রেসিডেনশিয়াল প্রপার্টিতে ইনভেস্ট করে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্টের প্রকারভেদ বা কোন মডেল আপনার জন্য সঠিক?

প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্টের বিভিন্ন মডেল রয়েছে। আপনার লক্ষ্য ও রিস্ক টলারেন্স অনুযায়ী বেছে নিন আপনার পছন্দ মতন মডেল।

রেন্টাল ইনকাম মডেল :

কাজের পদ্ধতি: প্রপার্টি ক্রয় করে দীর্ঘমেয়াদে ভাড়া দেওয়া হয় বা আপনি এককালীন কিছু টাকা এক্ষেত্রে পেতে পারেন।

আয়ের উৎস: মাসিক ভাড়া আয় থেকে প্রফিট শেয়ার করে একটি আয় সম্ভব এবং সেটা প্রতি মাসেই। স্থিতিশীল ক্যাশ ফ্লো থাকে এবং এক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে থাকে।

 

ফ্লিপিং মডেল :

কাজের পদ্ধতি : আন্ডার-ভ্যালুড প্রপার্টি কিনে রেনোভেশন করে দ্রুত উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আজকাল ভালো একটা ইনকাম সোর্স বের করা সম্ভব। এক্ষেত্রে এককালীন প্রফিট (২০-৩০%) পর্যন্ত হতে পারে। এই মডেলের সুবিধা হচ্ছে দ্রুত রিটার্ন, শর্ট-টার্ম কমিটমেন্ট করে ভালো একটা প্রফিট করা সম্ভব।

প্রধান এবং সবথেকে লাভজনক জয়েন্ট ভেঞ্চার ডেভেলপমেন্ট :

বড় বড় প্রজেক্ট (যেমন: অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স) তৈরি করে ইউনিট বিক্রি বা ভাড়া দিয়ে খুব ভালো একটি প্রফিট করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রজেক্ট সফল হলে মূলধনের ১.৫x-২x পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে হাই রিটার্ন প্রফিট ও কমিউনিটি ব্র্যান্ডিং করে বেশ লাভজনক হারে প্রফিট করা সম্ভব।

কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে।যেমন দীর্ঘ সময় যেমন (২-৪ বছর) পর্যন্ত সময় লেগে যায় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিগ্যাল কমপ্লেক্সিটি থাকতে পারে।

এখন আমরা জানবো প্যাসিভ ইনভেস্টমেন্টে সফল হওয়ার ৭টি স্টেপ :

১. লক্ষ্য নির্ধারণ: আপনি কি মাসিক আয় চাচ্ছেন নাকি এককালীন বড় প্রফিট করতে চাচ্ছেন? রেন্টাল মডেল vs ফ্লিপিং।

২. বাজেট ঠিক করা:আপনি আপনার দিক থেকে কত টাকা পর্যন্ত ইনভেস্ট করতে প্রস্তুত? মনে রাখুন লিকুইডিটি ঝুঁকি এড়াতে Emergency Fund আলাদা করে রাখুন সর্বদা।

৩. বিশ্বস্ত টিম খোঁজা:

– টিমের পূর্ববর্তী প্রজেক্টের হিস্ট্রি চেক করুন।

– অনলাইন রিভিউ, ক্লায়েন্ট টেস্টিমোনিয়াল যাচাই করুন।

– টিমের লিগ্যাল কমপ্লায়েন্স (যেমন: রিয়েল এস্টেট লাইসেন্স) নিশ্চিত করে নিন।

৪. মার্কেট রিসার্চ:

– কোন কোন এলাকায় ডিমান্ড বাড়ছে নিয়মিত খোজ করুন। (যেমন: শহরের উপকণ্ঠে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন)

– প্রপার্টির ভবিষ্যৎ ভ্যালু অ্যাপ্রিসিয়েশন সম্ভাবনা কেমন হতে পারে!

৫. লিগ্যাল ডিউ ডিলিজেন্স:

– ইনভেস্ট করার আগে অবশ্যই প্রপার্টির দলিল, খতিয়ান, ট্যাক্স ক্লিয়ারেন্স যাচাই করুন

– জমির প্রকৃতি (ফার্ম ল্যান্ড, রেসিডেনশিয়াল) পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হোন।

৬. চুক্তি স্বাক্ষর:

-ডিসপিউট রেজল্যুশন , প্রসেস , টিমের সার্ভিস চার্জ লিখিতভাবে নথিবদ্ধ করুন যাতে করে পরবর্তীতে কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়!

৭. মনিটরিং:

– টিমের কাছ থেকে নিয়মিত আপডেট পেতে একটি স্মার্ট টিম খুঁজে বের করুন। (ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট, প্রপার্টি স্ট্যাটাস) নিন নিয়মিত।

বাংলাদেশে প্যাসিভ প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্টের সুযোগ বেশি হওয়ার কারণ :

-অবকাঠামো উন্নয়ন : প্রতিনিয়ত মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ে, স্মার্ট সিটির প্রজেক্ট প্রপার্টির মূল্যবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করছে।

– মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি: ইকোনমিক গ্রোথের সাথে রেন্টাল ও হাউজিং ডিমান্ড বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

– টেকসহায়তা: বিভিন্ন ধরনের Proptech কোম্পানি বা বিজনেস প্রপার্টি ম্যানেজার এর সহায়তা নিন ।  তারা প্রোফিটেবল ইনভেস্টমেন্টকে তথ্য দিয়ে সহজ করছে প্রতিনিয়ত। এ ক্ষেত্রে আপনি  www.profitabd.com  এই ওয়েব সাইট টিও ভিজিট করতে পারেন ।

 

সতর্কতা: যে ৫টি ভুল এড়িয়ে চলবেন :

১. অন্ধভাবে ট্রাস্ট করা: “গ্যারান্টিড রিটার্ন” এর প্রলোভনে পড়বেন না। মার্কেটে কোনো গ্যারান্টি নেই এক্ষেত্রে করণীয় একটাই ইনভেস্ট করার পূর্বে সবার সত্যতা যাচাই করুন।

২. ডকুমেন্টেশন এড়ানো: ভার্বাল অ্যাগ্রিমেন্টে বিশ্বাস করলে পরবর্তীতে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন এক্ষেত্রে সবসময় সবধরনের ইনভেস্টমেন্ট কাগজপত্র দেখেশুনে করতে হবে।

৩. একটি প্রজেক্টে সব টাকা বিনিয়োগ: ডাইভার্সিফিকেশন হল সুরক্ষার মূলমন্ত্র অর্থাৎ একটি প্রজেক্টে সব টাকা ইনভেস্ট না করে ভিন্ন ভিন্ন প্রজেক্ট বস এক্টার পর আরেক টা  এরকম ভাবে  ইনভেস্ট করে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন।

৪. শর্ট-টার্ম ভাবনা: রিয়েল এস্টেট হল লং-টার্ম গেম। ধৈর্য্য ধরুন এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবুন।

৫. ইমোশনাল ডিসিশন: প্রপার্টির “সৌন্দর্য্য” দেখে ফাঁদে পড়বেন না, সংখ্যা (ROI, ক্যাশ ফ্লো) দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন।

সফলতার Case Study: ঢাকার একজন চাকরিজীবীর গল্প :  

আবির হাসান একটি প্রাইভেট ব্যাংকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। তিনি ২০২১ সালের শুরুর দিকে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি প্যাসিভ প্রপার্টি টিমের সাথে যুক্ত হন। টিমটি ঢাকার আফতাবনগরের একটি রেসিডেনশিয়াল প্রজেক্টে তার টাকা ইনভেস্ট করে। ২০২৩ সালে প্রজেক্ট এর কাজ ৬০% কমপ্লিট হলে তার ই এক কলিগ এর কাছে তা ৭০ লক্ষ টাকা বিক্রি করে দেন ।এই প্রজেক্ট এ তার খরচ হয়েছিল ৫০ লক্ষ টাকা । এছাড়া, তিনি আরেকটি প্রজেক্টে মাসিক ২৫০০০ টাকা ভাড়া পাচ্ছেন। তিনি এখন আর একটি ভালো প্রজেক্ট এ ইনভেস্ট এর অপেক্ষায় আছেন । তার সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে সে একটি ভালো টিম রিসার্চ করে খুঁজে বের করেছেন এবং মার্কেট ট্রেন্ড অ্যানালিসিস করে সঠিক টিম এর সাথে যুক্ত হয়েছেন।

এক্ষেত্রে আপনার যদি সঠিক জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট প্লান খুজে পেতে সমস্যা হয় বা টিম খুজে পেতে  যে সময় প্রয়োজন সেটাও না থাকে তাহলে আপনি আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন এবং আমরা আপনাকে একটি সুন্দর এবং সঠিক গাইডলাইন পেতে সহায়তা করব ।

এ বিষয়ে আরও ইনফরমেশন পেতে নিচের লিংক এ ভিজিট করতে পারেন ।

https://profitabd.com/my-home-bosundhara/

সময়ের মূল্য দিয়ে সম্পদ তৈরি করুন ;  

প্যাসিভ প্রপার্টি ইনভেস্টমেন্ট শুধু আয়ের মাধ্যম নয়, এটি একটি Financial Freedom এর রাস্তা। সঠিক টিম, সঠিক স্ট্র্যাটেজি এবং ডিসিপ্লিন থাকলে আপনি রিয়েল এস্টেটের জটিলতা এড়িয়ে শুধু লাভের অংশীদার হতে পারেন। শুরু করুন ছোট করে সেটি একটি প্রপার্টি দিয়ে হতে পারে। অভিজ্ঞতা ও আস্থা বাড়ার সাথে সাথে সম্পদও বাড়বে। আপনার সময় এখনই মূল্যবান, এটি নষ্ট না করে বিনিয়োগ করুন স্মার্টলি!

Spread the love

Join The Discussion